আধুনিক বিশ্বের নতুন বাড়ি কন্ডোমিনিয়াম

আধুনিক বিশ্বের নতুন বাড়ি কন্ডোমিনিয়াম

বিলাসবহুল বাংলো বা একটি বাড়ি, ভাড়া করা বাড়ি কিংবা অ্যাপার্টমেন্ট বা ফ্ল্যাট, আবাসন চাহিদা মেটানোর জন্য রয়েছে এখন নানা রকমের পথ। এইসবের বাইরে তেমন কোন আবাসন সুবিধা দেশে পরিচিতও নয়। তাছাড়া ইদানিং নতুন আরেক ধরনের আবাসন ব্যবস্থা জনপ্রিয় হয়ে উঠছে বাহির বিশ্বের দেশগুলিতে। সেটা হল কন্ডোমিনিয়াম প্রকল্প। তাই আজকে আপনাদের সামনে সেটাই তুলে ধরা হল।

বাংলাদেশের বাহিরে বেশ কিছু দেশেই কন্ডিমিনিয়ামের প্রচলন রয়েছে। ইস্ট এশিয়ার দেশ থাইল্যান্ড এবং মালয়শিয়ায় বেশ জনপ্রিয়।পশ্চিমা বিশ্বের দেশ গুলিতে অনেক বেশি জনপ্রিয়। কন্ডিমিনিয়াম শব্দটি নতুন হলেও এর প্রচলন প্রাচীন কালে, প্রথম শতাব্দীর ব্যবিলনেও কন্ডিমিনিয়াম টাইপের একই ধারণার আবাস্থল দেখা যায়। সেই ধারণাই সময়ের সাথে সাথে পরিণত হয়েছে এবং উদ্ভব ঘটেছে আজকের কন্ডিমিনিয়ামের। এরূপ আবাসন ব্যবস্থায় দেখা যায় যৌথ মালিকানার ভিত্তিতে একই ভবন বা কয়েকটি ভবনের সবাই কিছু বিশেষ সুবিধা উপভোগ করছেন। যে সুবিধাগুলো কেউ একা উপভোগ করতে চাইলে অনেকক্ষেত্রেই সম্ভব নয়। যেমন হাঁটা বা দৌড়ানোর জন্য নিজস্ব একটি খোলামেলা জায়গা, একটি সুইমিংপুল কিংবা নিজেদের জন্য নির্দিষ্ট একটি মেডিক্যাল ফ্যাসিলিটি। আর এসব দিককে মাথায় রেখেই সারা বিশ্বে জনপ্রিয় হয়ে উঠছে কন্ডোমিনিয়াম।

মূল পার্থক্যঃ
অ্যাপার্টমেন্ট কিংবা বাড়ির সাথে কন্ডোমিনিয়ামের পার্থক্য হল এর মালিকানা চুক্তির ভিন্নতা। কন্ডোমিনিয়াম সাধারণ ভাড়া পাওয়া যায় না, কিনতে হয়। অন্যদিকে ফ্ল্যাট ভাড়াও পাওয়া যায়। কিন্তু কন্ডিমিনিয়ামে কমন ইউনিট বা কমন স্পেসের মালিকানা একক থাকে না। বরং প্রকল্পের সবাই সম্মিলিতভাবে কমন সুযোগসুবিধাগুলো ব্যবহার করেন। সহজভাবে বলতে গেলে, এখানে আপনি বেশ কিছু কম স্পেসের মালিক হচ্ছেন যা একক মালিকায় হয়ৎ সম্ভব ছিল না। তাহলে, কন্ডোমিনিয়ামে আপনি কেন থাকবেন? কী কী সুযোগ সুবিধা পাবেন এখানে যে কারণে আপনি কন্ডোমিনিয়ামকে বেছে নেবেন?
কেনো কন্ডোনিয়াম?

কম খরচে অধিক সুবিধা
=================
কন্ডোমিনিয়ামে দেখাশোন এবং রক্ষনাবেক্ষণের দায়িত্বে থাকে নির্দিষ্ট কমিটি।
আপনি চাইলেই বাড়ি বা অ্যাপার্টমেন্টকে কাস্টমাইজ করে নেবার কিংবা নিজের ইচ্ছামত সাজিয়ে নেবার স্বাধীনতা পাবেন। কিন্তু একইসাথে আপনাকে ভাবতে হবে বাড়ি কী করে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখবেন তা নিয়ে। অথচ কন্ডোমিনিয়াম আপনাকে এইসব ভাবনা থেকে মুক্তি দেবে। এখানে বাড়ির রক্ষণাবেক্ষণ নিয়ে আপনার চিন্তা করার প্রয়োজন নেই। কারণ এসব সমস্যার সমাধানের জন্য আলাদা লোক নিয়োজিত আছে। কন্ডোমিনিয়াম একটু ভিন্নভাবে কাজ করে। প্রপার্টির রক্ষণাবেক্ষণের জন্য ইনচার্জ হিসেবে বোর্ড অব ডিরেক্টর অথবা হাউজ ওনার এসোসিয়েশন (HOA) থাকে। যে কারণে রক্ষণাবেক্ষণের কোনো কিছু নিয়ে সচরাচর আপনাকে মাথা ঘামাতে হয় না।

আধুনিক জীবনযাপন
================
অতিরিক্ত খরচ না করে আপনি সহজেই হাতের নাগালে পাবেন বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা। কন্ডোতে বসবাস করা মানে যা কিছু আপনি চাচ্ছিলেন সবই পেয়ে যাবেন হাতের কাছে। এই বিশেষ সুযোগ সুবিধাগুলোই কন্ডোমিনিয়ামকে আলাদা করে অন্য আবাসস্থলগুলো থেকে। জীবনযাপণের সব রকম লাক্সারি থাকছে এখানে। আধুনিক জিম, পার্টি স্পেস, লন এবং শিশুদের জন্য অভ্যন্তরীণ পার্ক, সকল কন্ডোমিনিয়ামের সাধারণ কিছু সুযোগ সুবিধা। এসব কিছুই উপভোগ করতে পারবেন আপনি কোনো রকম খরচের চিন্তা না করেই।

লোকেশন
========
কন্ডোমিনিয়াম নির্মাণ করা হয় বিশেষ লোকেশনে বাড়ি কিংবা অ্যাপার্টমেন্ট বিল্ডিং যে কোনো লোকেশনেই নির্মাণ করা যেতে পারে। এক্ষেত্রে বিল্ডারদের লোকেশন বাছাই করা নিয়ে কোনো বাধা নিষেধ থাকে না। কিন্তু কন্ডোমিনিয়াম সাধারণত শহরের কেন্দ্রে অথবা নগরীর ব্যস্ততা থেকে দূরে শান্ত নিরিবিলি পরিবেশে গড়ে ওঠে। লোকেশন যেটাই হোক না কেন, শপিং মল, যাতায়ত আর শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মতো সুবিধাগুলো মিলবে একদম ঘরের কাছে। একারণেই কন্ডো থাকার জায়গা হিসেবে সবার কাছে জনপ্রিয়।

নিরাপত্তা
==========
কন্ডোতে থাকে বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থা আপনি যদি থাকার জায়গা হিসেবে কন্ডোকে নির্বাচন করে থাকেন তাহলে ঘরের নিরাপত্তা নিয়ে আপনি থাকবেন সম্পূর্ণ নিশ্চিন্ত। কারণ কেবল আপনার ব্যক্তিগত নিরাপত্তার প্রশ্ন নয়, কন্ডোমিনিয়ামের পুরো কমিউনিটির নিরাপত্তার প্রশ্ন এটি। সার্বক্ষণিক সিকিউরিটি গার্ড, সিকুউরিটি ক্যামেরা এবং নিরাপত্তার আধুনিক জিনিসপত্র, সব মিলিয়ে কন্ডোমিনিয়ামের এই নিরাপত্তাবেষ্টনী আপনাকে যে নিশ্চিন্ত জীবন দেবে, কোনো প্রকার অর্থমূল্যই তার সাথে তুলনা করা যায় না।

কমিউনিটির ধারণা
==============
গড়ে উঠে সামাজিক বন্ধন আপনি যদি চমৎকার একটি কমিউনিটির অংশ হতে চান তাহলে কন্ডোই হবে আপনার জন্য সবচেয়ে ভাল অপশন। যেহেতু কন্ডমনিয়ামের সুযোগ-সুবিধায় কমিউনিটির সবাই একইসাথে ভোগ করে থাকে, তাই এখানে সবাই সবার কাছে পরিচিতমুখ হয়ে ওঠে এবং সবার সাথে সুসম্পর্কের সৃষ্টি হয়। এছাড়াও, যেকোনো উৎসব-অনুষ্ঠানে একত্রিত হওয়ার সুযোগ থাকায় সামাজিক বন্ধনও দৃঢ় হয়। যে কারণে জীবনে সামাজিক ভারসাম্য বজায় থাকে।

2 Comments

  • অনেকটা আমাদের দেশের সুপার হোস্টেলের মত।

  • বাংলাদেশে নাই কেন?

Leave a Reply

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।